100 Year

রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা’র শতবর্ষপূর্তি উৎসব

পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন

 

রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা’র শতবর্ষপূর্তি উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন

১৯ শে মার্চ ২০১৭, মঙ্গল প্রদীপ প্রজলনের মধ্যদিয়ে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকা এর শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের জাঁকজমকপুর্ন উদ্ভোধন করেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি শ্রী সুরেন্দ্র কুমারসিনহা ও শ্রীমৎ স্বামী সুহিতানন্দজী মহারাজ, জেনারেল সেক্রেটারী, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড় মঠ ভারত। উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় রাস্ট্রদূত শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা শ্রীমৎ স্বামী আমেয়নন্দজী মহারাজ স্বামী ধ্রুবেশানন্দজী মহারাজ বিচারপতি শ্রী সৌমেন্দ্র সরকার প্রমুখ। আনন্দলোকে মঙ্গঁলালোকে গানের ছন্দে ছন্দে সকল ধর্মের অনুসারীদের উপস্থিতে প্রায় দ্বিসহস্রধিক দর্শকে বিমোহিত করে। রাত সারে ৯টায় মঞ্চস্থ হয় নাটক “করুনা ধারায় এসো”। অনুষ্ঠান হয়েছে২৬ মার্চ পর্যন্ত।

 

রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা’র শতবর্ষপূর্তি উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রতিবেদন

২৬ শে ফেব্রুয়ারি ৩রা মার্চ, ২০১৮

 

শ্রীরামকৃষ্ণ পার্ষদ স্বামী প্রেমানন্দ মহারাজ ১৯১৬ সালের ১৩ ফেব্রুআরি মানব কল্যাণে রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা’র কার্যক্রমের যে শুভসূচনা করেছিলেন তা ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়েছে সময়ের অগ্রযাত্রায়। স্বামী বিবেকানন্দের “শিবজ্ঞানে জীবসেবার” আদর্শে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবায় নিয়োজিত রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা আজ শতবর্ষের মাইলফলক অতিক্রম করে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। শতবর্ষের মহিমাকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং আদর্শের ব্যাপক প্রচার ও সেবাকার্যক্রমকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে বর্ষব্যাপী নানা কর্মসূচী পলিত হচ্ছিল রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকায়। সম্প্রতি ২৬ ফ্রেরুআরি থেকে ৩ মার্চ ২০১৮ পযর্ন্ত অনুষ্ঠিত হল রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকা‘র শতবর্ষপূর্তি উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে ২৬ ফ্রেরুআরি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০মি. এ ৬ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের সাথে সাথে রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থিবৃন্দের দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠানকে বিশেষভাবে মাধুর্যম-িত করে তোলে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন বেলুড় মঠের জেনারেল সেক্রেটারী স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা’র সম্পাদক স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দিনে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীবর্গ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা, বিদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ও সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ, সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, দেশ-বিদেশের সন্ন্যাসিবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। উৎসবের প্রতিদিন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের বিপুল সমাগমে মুখরিত ছিল মিশন প্রাঙ্গন। উৎসবে ২য় দিন (২৭ ফেব্রুআরি, ২০১৮) রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার কার্যক্রমে এক বিশেষ দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এ দিন বিকাল ৩:০০ মি. এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে বিবেকানন্দ ইতিহাস ফান্ডের শুভ উদ্বোধন করেন স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ। উৎসবের বিভিন্ন দিন শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীমা সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের জীবনাদর্শ, এবং জনকল্যাণে রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা, যুব সম্মেলন, ভক্ত সম্মেলন, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ভাবপ্রসার সংসদের সম্মেলন, মাতৃসম্মেলন, রামায়ণ গান, নাটক, যাত্রাপালা, গীতিআলেখ্য এবং ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল এ উৎসবে। অলোচনা অনুষ্ঠানসমূহে মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করে শ্রোতৃবৃন্দকে ঋদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেন শ্রীমৎ স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ সহসঙ্ঘাধ্যক রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড় মঠ, ভারত, শ্রীমৎ স্বামী সর্বদেবানন্দজী মহারাজ, মিনিস্টার-ইন-চার্জ, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউ এস এ, শ্রীমৎ স্বামী গিরিশানন্দজী মহারাজ, ম্যানেজার, বেলুড় মঠ, স্বামী জ্ঞানলোকানন্দ মহারাজ, ট্রাস্টি, রামকৃষ্ণ মঠ, বেলুড় মঠ ও সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ, পুরুলিয়া, স্বামী সত্যদেবানন্দ মহারাজ ,সম্পাদক রামকৃষ্ণ মিশন, মুম্বাই, স্বামী সর্বলোকানন্দ মহারাজ, সম্পাদক, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত, জনাব এইচ, টি ইমাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ড. শ্রীবীরেণ সিকদার, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, এডভোকেট তারানা হালিম, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রণালয়, প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর শওকত আরা হোসেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মারুফী খান, অধ্যক্ষ, ইস্পাহানি গার্লস স্কুল ও কলেজ, শ্রীমিল্টন কুমার দেব, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. আদর্শ স্বাইকা, উপ রাষ্ট্রদূত,ভারতীয় দূতাবাস, ঢাকা, প্রমূখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। বিদগ্ধ আলোচকবৃন্দের অলোচনায় রামকৃষ্ণ মিশন এর আদর্শ ও কার্যক্রম মানব সেবার ক্ষেত্রে এক অনন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হয়েছে। ২ মার্চ, ২০১৮ ভাবপ্রসার সংসদের সম্মেলনে রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার ইতিহাস বই এর মোড়ক উন্মোচন করেন রামকৃষ্ণ মঠ, বেলুড় মঠের ম্যানেজার শ্রীমৎ স্বামী গিরিশানন্দজী মহারাজ। রামকৃষ্ণ আশ্রম চাঁদপুরের অধ্যক্ষ ও রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকা’র প্রাক্তন সম্পাদক স্বামী স্থিরাত্মানন্দ মহারাজ কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত এ বই নি:সন্দেহে রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা সম্পর্কে জ্ঞানপিপাসুদের আনন্দ বর্ধন করেছে। এ দিন বিকালে অনুষ্ঠিত মাতৃসম্মেলনে রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা ও বিবেকানন্দ বিদ্যার্থিভবন, ঢাকার শিক্ষার্থিদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এ বৃত্তি প্রদান করে বিবেকানন্দ বিদ্যার্থিভবন, রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা’র প্রাক্তন ছাত্র শ্রীপ্রকাশ চক্রবর্তী প্রতিষ্ঠিত বিবেকানন্দ স্টাডি এন্ড ফিলান্থ্রপিক সেন্টার, ইউ এস এ। শিক্ষাবিৃত্তি শিক্ষার্থিবৃন্দের হাতে তুলে দেন মাতৃসম্মেলনের প্রধান অতিথি এডভোকেট তারানা হালিম, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করে শ্রেতাদের মুগ্ধ করেন শ্রীরথীন্দ্রনাথ রায়, শ্রীইন্দ্রমোহন রাজ বংশী, শ্রীসুবীরনন্দী, ফাতেমাতুজ জোহেরা ও কলকাতা থেকে আগত আচার্য শ্রীসঞ্জয় চক্রর্তী প্রমুখ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পিবৃন্দ। সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন ভারত থেকে আগত সুফী বাওরা ও তাঁর দল। নরসিংদী শিল্পিগোষ্ঠির পরিবেশনায় নাটক ‘অনুভবে শ্রীরামকৃষ্ণ’ ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক শ্রীচিত্তরঞ্জন দাসের পরিচালনায় যাত্রাপালা ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ দর্শকদের কাছে বিশেষ ভাবে সমাদৃত হয়েছিল। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার শ্রীভাস্কর বন্দোপাধ্যায়, ও অধ্যাপক শ্রীনিমাই ম-ল, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। ১ মার্চ নৃত্যাঞ্চলের শিশুদের নৃত্যানুষ্ঠান এবং বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের বিশিষ্ট বংশীবাদক মি. মামুন এর বাঁশী পরিবেশনা, এবং ২ মার্চ, ২০১৮ ইন্দিরাগান্ধী কালচারেল সেন্টারের নান্দনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দর্শকদের হৃদয় মাতিয়েছিল। ৩ মার্চ, ২০১৮ মন্দিরে ভাবগম্ভীর ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের বিশেষ পূজা ও হোমের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় ৬ দিনব্যাপী আয়োজিত এ আনন্দঘন অনুষ্ঠানের।

 

  • অনুষ্ঠান সমূহের কিছু স্থিরচিত্র